This Day In History: 1971-09-18
কৃষ্ণপুর গণহত্যা দিবস
একটি নারকীয় গণহত্যা ঘটে ১৯৭১ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর হবিগঞ্জের কৃষ্ণপুরে। এই দিনে পাকহানাদার বাহিনী হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলার হিন্দু এলাকা কৃষ্ণপুর গ্রামে ১২৭ জন নিরীহ গ্রামবাসীকে ব্রাশফায়ার করে নির্মমভাবে হত্যা করে। রাজাকারের সহযোগিতায় এই হত্যাকাণ্ডে আহত হয়েছিলেন শতাধিক ব্যক্তি। এত লাশ একসঙ্গে সৎকারের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় পাশের নদী দিয়ে লাশ ভাসিয়ে দিয়েছিলেন স্থানীয় নারীরা। সেই বিভীষিকাময় দিনের কথা মনে করে আজও অনেকের মন কেঁপে ওঠে।
১৮ সেপ্টেম্বর ভোর ৪টা থেকে ৫টার দিকে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম উপজেলার পাক সেনা ক্যাম্প থেকে একটি স্পিডবোট ও আট থেকে ১০টি বাওয়ালি নৌকায় করে ১০ থেকে ১৫ জনের পাকহানাদার
বাহিনী ওই গ্রামে আসে। পাকহানাদাররা দুটি স্পিডবোটে করে দুটি দলে আসে। তাদের সঙ্গে যোগ দেয় লাখাই উপজেলার মুড়াকরি গ্রামের লিয়াকত আলী, বাদশা মিয়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর উপজেলার ফান্দাউকের আহাদ মিয়া, বল্টু মিয়া, কিশোরগঞ্জের লাল খা, রজব আলী, সন্তোষপুরের মোর্শেদ কামাল ওরফে শিশু মিয়ার নেতৃত্বে ৪০ থেকে ৫০ জনের একদল রাজাকার-আলবদর। আর তাদের পরামর্শেই এ গ্রামে হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়। গ্রামে ঢুকে একটি দল নৌকা থেকে নেমে নির্বিচারে গুলি ছুড়তে শুরু করে। অন্য দলটি তখন গ্রাম এবং নৌকা পাহারা দিতে থাকে। চণ্ডীপুরে মাত্র ১৬টি পরিবারের বাস ছিল। কৃষ্ণপুর এবং পার্শ্ববর্তী চণ্ডীপুর গ্রামটি হিন্দু অধ্যুষিত ছিল। সে গ্রামের সব বাসিন্দাকে একই লাইনে দাঁড় করিয়ে গুলি করা হয়। ৪৫ জন হিন্দু এতে মারা যায়। এ গণহত্যায় মাত্র দুজন ব্যক্তি বেঁচে যায়। লালচাঁদপুর এলাকায় মধু নমঃশূদ্রের বাড়িতে ৪০ জন হিন্দুকে বেষ্টন করে রাখা হয়। তাদের সবকিছু লুটপাটের পর একই লাইনে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়।
সে রাতে পাকবাহিনী অন্তত ১৩১ পুরুষকে স্থানীয় কমলাময়ী উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে লাইনে দাঁড় করিয়ে ব্রাশফায়ার করে। পরে আগুন দিয়ে গ্রামের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয় এবং লুটপাট করে। এ ছাড়া গ্রামের নিরীহ নারীদের সম্ভ্রমহানি করে। এ হত্যাযজ্ঞ ও নির্যাতন সেদিন বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে। ওই সময় গ্রামে ঢুকে রাজাকাররাও গুলি চালাতে থাকে এবং গ্রামে লুটপাট শুরু করে। তারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে বন্দুকের মাথা টিকিয়ে গ্রামবাসীদের নগদ টাকা-পয়সা এবং স্বর্ণালঙ্কার লুট করে নিয়ে যায়। রাজাকারদের দ্বারা প্ররোচিত হয়ে পাকিস্তানি সৈন্যরা পুরো গ্রামে আগুন ধরিয়ে দেয়।